প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, এক তরুনের কথা শুনতে পাচ্ছেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি এই দেশেরই একটা ছেলে। যার বয়স খুব বেশি না। যে রাজনৈতিক মারপ্যাচ খুব বেশি বুঝে না। বুঝতে চায়ও না। অন্য আট দশটা ছেলের মতো যে এই দেশটা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে এবং বিশ্বাস করে তার স্বপ্ন একদিন না একদিন সত্যি হবেই।
আমাদের সম্পদ হয়তো কম। আমাদের ক্ষমতাও হয়তো বেশি না। পত্রিকা পড়লে টিভি খুললে সুসংবাদের চেয়ে দুঃসংবাদ বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু তাতে কি? আমি অনুভব করার চেষ্টা করি আমরা খুব আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াচ্ছি। এগিয়ে যাচ্ছি।

টিভিতে যখন খুব ভালো কোন খবর দেখি তখন অন্য অনেক তরুনের মতোই আমার চোখে পানি এসে যায় আনন্দে। প্রায়ই টিভির সামনে থেকে চলে আসি। বাবা হয়তো দেখে বলবেন "ছেলেটা কাঁদে কেনো?"।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
কিছু দিন থেকেই শুনছি আপনার সরকার একটা ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সিদ্ধান্তের কারনে এদেশের গ্যাস নিয়ে যাবে বিদেশি একটি কোম্পানি। যে গ্যাসের পুরোটাই আমাদের হওয়ার কথা ছিলো সেটাতে ভাগ বসাবে বহুজাতিক বেনিয়ারা। আমরা পাবো মাত্র ২০ ভাগ অথবা কিছুই পাবো না।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনাকে প্রচন্ড জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে যে সম্পদকে এই দুঃখি দেশটা পরম মমতায় যুগের পর যুগ নিজের বুকে আগলে রেখেছে কোন অধিকারে সেই সম্পদকে আপনি অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছেন? কে দিয়েছে আপনাকে এই অধিকার?
আমি হয়তো কোন দেশপ্রেমিক নই, কোন দেশপ্রেমিকের সন্তানও নই। বিদেশে গিয়ে বিলাসবহুল জীবন শুরু করাটা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমাকে সারাটা জীবন এই দেশেই থাকতে হবে। খেয়ে পরে বাঁচতে হবে।
কিন্তু প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি জানেন যে দেশটাতে আমাকে বাকি জীবন কাটাতে হবে সেটাকে আপনি নরক বানানোর প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছেন? আমাদের চোখের সামনে আছে নাইজেরিয়ার উদাহারণ। নিজেদের সম্পদ থাকা স্বত্তেও নাইজেরিয়া পরিনত হয়েছে এক অসহায় জাতিতে।
খুব সহজ বাংলায় বলতে গেলে আপনি এবং আপনারা আমাদের নিয়ে, আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে একটা খেলায় মেতে উঠেছেন।
প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করছেন- 'দেখো! কিচ্ছু হবে না। আর হলেই বা কি? এটা তেমন ব্যাপার না।'
কনকো ফিলিপস এর সাথে যে অভিশপ্ত চুক্তিটি করা হয়েছে সেটা বাতিলের সুযোগ থাকা স্বত্তেও তা আপনারা করছেন না।
একের পর তির্যক মন্তব্য করছেন আমাদের নিয়ে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার কিংবা আপনাদের ভাষ্যমতে আমরা হলাম টোকাই। হ্যা... স্বীকার করছি আমরা টোকাই। আমাদের প্রতিদিন নতুন শার্ট কেনার টাকা নেই। নুন আনতে আমাদের পান্তা ফুরোয়। আমাদের চাল নেই চুলো নেই।
কিন্তু এই দেশটার জন্য আমাদের মমতার কোন ঘাটতি নেই। আপনার প্রত্যক্ষ মদদে এই দেশটা নরক হয়ে উঠবে আমরা তা সহ্য করবো না। হ্যা। খুব স্পষ্ট করে বলছি- "আমরা সহ্য করবো না"
এই দেশটা আমার মায়ের সমান। আমার পূর্বপুরুষরা এই দেশের জন্য রক্ত ঝরিয়েছেন। প্রতিবারই তারা সফল হয়েছেন। এই দেশের স্বার্থবিরোধী কোন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে লড়ার জন্য এর থেকে বড় অনুপ্রেরণা আর আমাদের জন্য কি হতে পারে?

প্রধানমন্ত্রী,
একটু কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। মানুষ ফুঁসছে। নিরব বিপ্লব সব সময় সরব বিপ্লবের চেয়ে বেশি ভয়ংকর।
আমরা বেশিরভাগ সময় চুপ করে থাকি। কিন্তু "আমরা শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি"। এবারও লড়বো। মায়ের জন্য লড়বো। আমাদের মাকে আমরা ধর্ষিত হতে দেবো না। এ দেশের সম্পদ দেশেই থাকবে। এক বিন্দুও অন্য কোথাও যাবে না। আমাদের দেশটাকে আমরা নাইজেরিয়া হতে দেবো না।
জানি, আমার কিংবা আমাদের এই কথাগুলো অসংখ্য দেয়াল আর চাটুকার ডিঙ্গিয়ে আপনার কানে যাবে না শেষ পর্যন্ত। তাছাড়া আপনি দেশপ্রেমিক মানুষ। দেশের সমস্যা নিয়ে ব্যাস্ত। তাই দেশের "টোকাই"রা আগামী ৩ তারীখ রাজধানীতে অর্ধ-দিবস হরতাল ডেকেছে।
এই টোকাইদের ক্ষমতা সীমিত। আপনার ক্ষমতা অসীম। শক্তি প্রয়োগ করে হরতাল হয়তো থামাতে পারবেন অথবা পারবেন এই আমাদের মত টোকাইদের জেলে পুড়তে কিন্তু ক'জনের কন্ঠ বন্ধ করবেন?
কয়েকজন প্রতিবাদীকে থামালেই কি প্রতিবাদ থামাতে পারবেন? পারবেন না।
লেখাটার শেষে এসে আপনার জন্য করুনাই হচ্ছে। জনস্রোতের বিপক্ষে দাঁড়ানো এক প্রধানমন্ত্রীকে আমার কাছে "ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার" ছাড়া আর তেমন বিশেষ কিছুই মনে হচ্ছে না।
ভালো থাকুন।

source:

http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150218464692443
http://www.somewhereinblog.net/blog/razybd/29404044

5 comments:

  1. thanx for comment :)
    you can try google translator.
    translated to english

    ReplyDelete
  2. প্রচন্ড আবেগ...... আর কিছু বলার নেই।

    ReplyDelete
  3. হা, উপরের কথাগুলো বলেছেন মনের কথা। কিন্তু এদেশে তো বেকার সমস্যা প্রকট। অর্থনৈতিক সমস্যা সকলেরই। আর এ সব কারনে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তাই দেশের কোন খবর রাখা হয়না আমার। হরতালের চেয়ে ভাল কিছু কি নেই গ্যাস পাচার বন্ধে। দেশের সাধারন মানুষ এত কিছু বোঝে না, আমাদের কাছে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি মানে স্বাভাবিক ব্যাপার। গ্যাস না থাকলে যে দেশের উতপাদন ক্ষতিগ্রস্ত্র হবে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, কলকারখানা বন্ধ হবে, বেকারত্ব বাড়বে, সন্ত্রাস বাড়বে, মোট কথা অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হলে যে সকলের জীবনেই এই প্রভাব পড়বে তা আমরা বুঝতে পারছিনা বলেই আজ গ্যাস পাচারের খবর আজ জানিনা এবং চুপ করে বসে থাকতে পারছি। হা আমরা তো টোকাই, আর দেশ ফকিন্নি হলে, প্রকট অর্থনৈতিক সমস্যা হলে প্রধানমন্ত্রীর কি আসে যায়? উনারা সবসময়ই মাসিডিজ গাড়ী নিয়ে চলবেন আর নিজের পেট ভরাতে হরতাল, গ্যাস পাচার, দুর্নীতি করে দেশের অর্থণীতির বারোটা বাজিয়েছেন এবং এর শেষ দেখাতে চাচ্ছেন। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশ ও মানুষের প্রচেষ্টায় দেশ কে আমরা যতই এগিয়ে নিতে চাই, তা সম্ভব হচ্ছেনা।
    সবার কাছে আমার অনুরোধ আমাদের নিজেদের, নিজের স্বার্থে গ্যাস পাচার বন্ধে এগিয়ে আসুন। নতুবা আমরা ......।

    ReplyDelete

Comment here if you have anything to ask me. Please do not spam.