কাজী আনোয়ার হোসেন

আজকের ছুটির দিনে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে কাজী আনোয়ার হোসেন নিয়ে রচনাটা পড়লাম। অনেকদিন ধরে উনার সম্পর্কে কিছু জানার ইচ্ছা ছিল। আগামী সপ্তাহে উনার জন্মদিন। লেখাটা ব্লগ করে রাখলাম।

কাজীদা রহস্যঃ

কাজী আনোয়ার হোসেন (ছবি: জাহিদুল করিম)
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সফল চরিত্র মাসুদ রানার জনক। বিপুল জনপ্রিয় সেবা প্রকাশনীর প্রাণপুরুষ। তাঁর সম্পাদিত রহস্যপত্রিকা পাঠকের কাছে আজও আদরনীয়। তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। পাঠক ও কাছের মানুষের কাজীদা। আসছে ১৯ জুলাই তিনি পা রাখছেন ৭৬ বছরে। তাঁকে নিয়েই এবারের মূল রচনা।

কল্পজগতে রোমাঞ্চ আর অ্যাডভেঞ্চারের নেশা প্রবলভাবে লেগেছিল শৈশবেই। বুঝি-বা সেই অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় একদিন ট্রেনে চেপে চলে গিয়েছিলেন ভৈরব। ভাঙা কাচ কুড়িয়ে বস্তা ভর্তি করে মনের আনন্দে আবার ট্রেনেই ঢাকায় ফেরার পর হাতেনাতে ধরা। বাসা থেকে পালিয়ে এসব! ক্রুদ্ধ বাবা পারলে এ রকম বেয়াড়া ছেলেকে হাজতে ঢুকিয়ে দেন আর কি! অথচ কী আশ্চর্য! কয়েক বছর পর সেই বাবাই এ রকম ছেলেকে উৎসাহ জোগালেন লেখক হতে। অনেক দূর দেখেছিলেন তিনি। দেখবেনই বা না কেন? বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব যে কাজী মোতাহার হোসেন
মজার বিষয় হলো, লেখক হওয়ার কোনো পরিকল্পনাই ছিল না ছেলের। হোক না বাংলা সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়া ছাত্র। খ্যাতনামা অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হাই টিউটোরিয়ালে নম্বরই দিতে পারছিলেন না। অন্যরা যেখানে কয়েক পৃষ্ঠা ভরে লিখে আনছে, সেখানে এ কিনা লিখেছে আধা পৃষ্ঠা। ছাত্রটি অনড়। তার দাবি, যা চাওয়া হয়েছে, সবই লেখা আছে এই আধা পাতায়। পুরোটায় চোখ বুলিয়ে অধ্যাপক বললেন, ‘এটা তো সাহিত্য। জ্যামিতি না। তোমাকে তো কিছু নম্বর দিতে হবে। তাই বাড়িয়ে লিখে আনো।’ শেষ পর্যন্ত দেড় পৃষ্ঠা লিখে জমা দেওয়ায় কিছু নম্বর জুটেছিল।
কিন্তু এই যে সোজাসাপ্টা করে, অল্প কথায় গুছিয়ে লেখার প্রয়াস, সেটাই একদিন বাংলা সাহিত্যের ভাষায় একটি নতুন মাত্রা দেবে, তা-ই বা তখন কে জানত? দৃশ্যকল্প সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা আর পাঠককে ঘটনার ভেতর টেনে নিয়ে গিয়ে ভ্রমণ করানোর কাজটি ঘটে গেল এই ভাষা খুঁজতে গিয়ে। কাজী আনোয়ার হোসেন নিয়ে এলেন সাহিত্যে ‘রিপোর্টাজ’ ভাষা। শুধু আনলেনই না, প্রতিষ্ঠা করলেন এই ভাষাশৈলীকে। সেবা প্রকাশনীর বা সেবার ভাষা। আজকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে সহজ ভাষায় অল্প কথায় গুছিয়ে লেখার যে চর্চা, তাও তো এসেছে সেবার ভাষারীতি অনুসরণ করেই।
শুধু ভাষাশৈলীতে নতুনত্ব আনাই নয়, তার চেয়েও বড় হলো, পাঠকের মনোজগতে নতুন দুয়ার খুলে দেওয়া। এই ‘মাসুদ রানা’ই বিরাট এক পরিবর্তন নিয়ে এল পাঠকের জন্য। লুকিয়ে থাকা অ্যাডভেঞ্চারপিয়াসী মনটা বুঝি লাফ দিয়ে উঠল। নতুন নতুন দেশে, বন্দরে, শহরে, হোটেলে, সাগরসৈকতে, রহস্য-রোমাঞ্চের পর্যটক হয়ে উঠল। পাঠক খুঁজে পেতে লাগল নতুন এক জগৎ। প্রজাপতি মার্কা পেপারব্যাকের দুই মলাটের মাঝে ডুব দিয়ে হারিয়ে যেতে বাধা থাকল না আর। এভাবেই পাঠকের মনোভূগোলটা সাত সাগর আর তেরো নদীর ওপারে নিয়ে গেলেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
কৈশোরে বানিয়ে বানিয়ে কত-কিছু লিখতেন। সেজ বোন খুরশীদা খাতুন ছোট ভাই নওয়াবের খাতায় সেসব লেখা পড়ে বড্ড খুশি হয়েছিলেন। আর তাই তো লেখালেখির প্রদীপের সলতে জ্বালাতে উৎসাহ দিয়েছেন তখন থেকেই। কৈশোরের সেই অনুপ্রেরণা অনেকটা সবার অলক্ষ্যেই নিবিড় হয়ে গেঁথে গিয়েছিল মনে।
বইমেলায় সেবা প্রকাশনীর স্টলে ভিড় (ছবি: সংগৃহীত)
২.
শুরুটাও ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। পাখি শিকারের জন্য একটা বন্দুক কেনার টাকার সন্ধান করতে গিয়ে বই লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। বেশ দ্রুত দুটো পাণ্ডুলিপি দাঁড় করিয়েও ফেললেন। কিন্তু কে প্রকাশ করবে? এক প্রকাশক এই শর্তে রাজি হলেন, অন্তত ১০টি বই আগে লিখে দিতে হবে। তারপর কিছু টাকা-পয়সা না হয় দেওয়া যাবে। দ্বিতীয়জন আরেক কাঠি সরেস। টাকা? কাগজ আর কালি ছাড়া কী-ই বা খরচ হয়েছে—এমন তরো ভাব তার।
সুতরাং, বই প্রকাশ করা হলো না তখনই। তবে বাবা কাজী মোতাহার হোসেন পাণ্ডুলিপি দুটো পড়ে বলেছিলেন রেখে দিতে। সুযোগ পেলে নিজেই ছেপে বের করার পরামর্শও ছিল তাঁর। শেষতক সেটাই হলো। প্রেসের ব্যবসাও হবে, বইও প্রকাশ করা হবে—এই চিন্তা থেকেই সেগুনবাগান প্রেসের যাত্রা শুরু। সেটা ১৯৬৪ সালে। কালক্রমে সেটাই রূপ নিল সেবা প্রকাশনীতে। মূলত কিশোর পাঠকদের রহস্যজগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই ‘কুয়াশা’ সিরিজ দিয়ে যাত্রা শুরু।
এই সময় বন্ধু মাহবুব আমিন প্রকাশিত বইগুলো পড়ে জেমস বন্ডের ডক্টর নো ধরিয়ে দিলেন বিদ্যুৎ মিত্রের হাতে। ‘বিদ্যুৎ মিত্র’ ছদ্মনামেই লিখতে শুরু করেছিলেন কাজী আনোয়ার। তো, জেমস বন্ডের বইটি পড়ার পর একাধারে চমৎকৃত ও উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। ঠিক করলেন, বাংলাতেই ওই রকম মানের থ্রিলার লিখবেন। তাই পড়তে শুরু করলেন বিভিন্ন বিদেশি বই। কল্পনা করা যায়, সেই ১৯৬৫ সালে মোটরসাইকেলে করে আনোয়ার ঘুরে এসেছিলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি এবং তা কাহিনি সাজানোর জন্য! এরপর সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন ধ্বংস-পাহাড়। বাংলা ভাষার প্রথম মৌলিক স্পাই থ্রিলার এটি। ১৯৬৬ সালের মে মাসে বাজারে এল বইটি। হইচই পড়ে গেল। প্রশংসা ও নিন্দা দুই-ই জুটল। একে তো বাঙালির গুপ্তচরবৃত্তি ও অ্যাডভেঞ্চার, তার ওপর যৌনতা। এরপর ১০ মাস সময় নিয়ে লেখা হলো ভারতনাট্যম। এবার আর যায় কোথায়? রক্ষণশীলেরা তো মার-মার করে উঠলেন। কিন্তু তরুণসমাজ ও প্রগতিমনস্কদের অনেকেই স্বাগত জানালেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি আহসান হাবীব। তিনি আনোয়ারকে বলেছিলেন কারও কথায় কান না দিতে। শুধু তা-ই নয়, দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতায় একাধিক গল্প ছেপেছিলেন কাজী আনোয়ারের। মউত-কা টিলা নামে ধ্বংস-পাহাড় বইটির উর্দু সংস্করণও বেরিয়েছিল।
তবে মৌলিক স্পাই থ্রিলার লেখা নিতান্তই কঠিন কাজ। বাস্তব অভিজ্ঞতা আর প্রচুর পড়াশোনা ছাড়া এটা প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে মাত্র দুটো বই বের করে তো আর বসে থাকা যায় না। তত দিনে জীবিকার উৎস হিসেবে এই লেখা ও প্রকাশনাকে বেছে নিয়েছেন। পাঠকের মধ্যেও চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং, শুরু হলো ‘বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে’ লেখা। এভাবে মাসুদ রানার কাহিনি সংগ্রহ করা হয়েছে অ্যালিস্টেয়ার ম্যাকলিন, জেমস হেডলি চেজ, রবার্ট লুডলাম, উইলবার স্মিথ, ইয়ান ফ্লেমিংসহ অসংখ্য লেখকের বই থেকে। নিন্দুক ও সমালোচকেরা এই অ্যাডাপটেশনকেই বিরাট এক অন্যায় বলে অভিহিত করতে লাগলেন। অথচ, মূল কাহিনির কাঠামো সামনে রেখে প্রচুর ভেঙেচুরে ও চরিত্র সংযোজন-বিয়োজন করে ‘মাসুদ রানা’র প্রতিটি বই লেখা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এতে করে বরং পাঠককে বহু নতুন ও অজানা বিষয়ের স্বাদ দিতে সক্ষম হলো ‘মাসুদ রানা’। যৌনতা দিয়ে পাঠক টানার অভিযোগও উঠেছিল। বলা হলো, ‘কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ সতর্কবাণী লাগিয়ে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বাড়ানো হচ্ছে। অথচ প্রথম দিকের ২৫-৩০টি বই বাদে আর কোনোটিতেই যৌনতার তেমন কিছু নেই। তার পরও ‘মাসুদ রানা’র বই ৪০০ পেরিয়ে গেছে। গল্পের টানেই এমনটি হয়েছে।
‘মাসুদ রানা’সহ প্রতিটি পাণ্ডুলিপি কাজীদার নিজের হাত দিয়ে চূড়ান্ত হয়। এ জন্য প্রচুর সময় দিতে হয় তাঁকে। কাজের প্রচণ্ড ব্যস্ততায় গিটার নিয়ে বসা হয় না বললেই চলে। মাছ ধরার শখটাও বাদ দিতে হয়েছে। গানের পালা তো সাঙ্গ হয়েছে বহু আগেই। অথচ রেডিওতে গান গাইতে গিয়েই কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে পরিচয়। অতঃপর দুজন দুজনকে পছন্দ ও বিয়ে। মাঝেমধ্যে সাঁতার কাটতে যান। মেডিটেশনটা অবশ্য নিয়মিত চর্চা করেন কাজীদা। মেডিটেশনসহ আত্মোন্নয়নমূলক বইগুলোও সেবার প্রকাশনার মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কতজনে মেডিটেশন শেখার জন্য তাঁর কাছে ছুটে যেত, সেটা নিয়েও কাণ্ডকারখানা কম নেই।
তবে স্পাই থ্রিলারে থেমে থাকল না সেবা প্রকাশনী। বিশ্ববিখ্যাত ক্ল্যাসিকগুলো কখনো সংক্ষিপ্ত রূপান্তর, কখনো বা পূর্ণ অনুবাদের মাধ্যমে পাঠকের হাতে তুলে দিতে শুরু করল। বিষয়বৈচিত্র্য বাড়াতে এল বাংলা ভাষায় প্রথমবারের মতো ওয়েস্টার্ন। কাজী মাহবুব হোসেনের আলেয়ার পিছে পাঠকচিত্তকে সেই যে মুগ্ধ করা শুরু করল, তা কম-বেশি আজও চলছে। আবার ক্লাসের পড়া ফাঁকি দিয়ে ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের বই গোগ্রাসে গিলতে শুরু করল কিশোর পাঠকেরা। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। পরের দিন অঙ্ক পরীক্ষা। নির্ঘাত ফেল করব জেনে পাঠ্যবইয়ের নিচে তিন গোয়েন্দা সিরিজের কংকাল দ্বীপ পড়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম আমি নিজেই। ওই সময়টায় নিজেকে ‘কিশোর পাশা’ ভাবতে চাইত বহু ছেলে। রকিব হাসানের কাছে কত যে চিঠি আর টেলিফোন গেছে, তার ইয়াত্তা নেই।
সেবার আকর্ষণ জোরদার হয়ে উঠল কিশোর ক্ল্যাসিক সিরিজের কারণে। বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনীকে কিশোর-পাঠোপযোগী করে সামনে আনলেন নিয়াজ মোরশেদ। এরপর একে একে বেনহার, রবিনসন ক্রশো, কালো তীর, সলোমানের গুপ্তধন, প্রবাল দ্বীপ, সুইস ফ্যামিলি রবিনসন, কপালকুণ্ডলাসহ বিশ্বসাহিত্যে নামীদামি গ্রন্থগুলো বাংলা ভাষাভাষী কিশোর পাঠকদের কাছে নিয়ে আসা হলো।
ট্রেজার আইল্যান্ড, বাস্কারভিলের হাউন্ড, শি, রিটার্ন অব শি, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টসহ আরও কিছু অসাধারণ অনুবাদের কথাই বা না বলা যায় কীভাবে? কিংবা জুলভার্নের সায়েন্স ফিকশনগুলোর সাবলীল ও সংক্ষিপ্ত রূপান্তর? শেখ আবদুল হাকিম, নিয়াজ মোরশেদ, জাহিদ হাসান, আসাদুজ্জামানসহ আরও অনেকের সোনালি কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে ঝরঝরে গদ্যের অনুবাদগুলো। নিয়াজ মোরশেদের অনুবাদ সেবার সুবর্ণ সময়ে সবচেয়ে বেশি পাঠক টেনেছে। হালে সেবার অনুবাদকদের মধ্যে ইসমাইল আরমান টানছেন পাঠক।
১০০ জনের বেশি লেখক-অনুবাদক তৈরি হয়েছে সেবা প্রকাশনী থেকে। আজকের বিভিন্ন নামকরা গণমাধ্যমে যাঁরা কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁদের অনেকেই তো সেবা, রহস্যপত্রিকা বা কিশোরপত্রিকারই প্রত্যক্ষ সৃষ্টি। আর পরোক্ষভাবে যে কতজন আছেন, তার ইয়ত্তা নেই। লেখালেখি করে জীবিকা অর্জনের দুঃসাহস সেবাই জুগিয়েছে তাঁদের অনেককে।

৩.
১৯৭০ সালেই রহস্য পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, হাশেম খান, শাহাদত চৌধুরী মিলে একটি চৌকস দল কাজী আনোয়ার হোসেনকে ঘিরে এই কাজটি করল। রাহাত খান ও রনবীও ছিলেন সঙ্গে। অবশ্য পর পর চারটি সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর তা থেমে যায়। কেননা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ তখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। স্বাধীনতার এক যুগ পেরিয়ে ১৯৮৪ সালে রকিব হাসানের উৎসাহে রহস্য পত্রিকা আবার আত্মপ্রকাশ করল নবরূপে। শেখ আবদুল হাকিমনিয়াজ মোরশেদও যোগ দিলেন। পাঠকদের কাছে আরেকটি নতুন দিক উন্মোচন করলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সময় পরিবর্তনে তাঁর দুই ছেলে কাজী শাহনূর হোসেনকাজী মায়মুর হোসেন হাল ধরেছেন রহস্য পত্রিকার। সেবা প্রকাশনীরও অনেক কিছু দেখভাল করতে হয় তাঁদের। লিখছেন। ব্যবসাও দেখছেন।
৪.
নিউজপ্রিন্ট কাগজে বাংলায় পেপারব্যাক বই জনপ্রিয় করার মধ্য দিয়ে নিজের ব্যবসায়িক সাফল্যকে অনেক ওপরে তুলে নিতে সক্ষম হলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। লেখক-সম্পাদকসত্তার চেয়ে এই প্রকাশক-ব্যবসায়ী সত্তাটি তাই তাঁর কাছে কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। একাধিক আলাপচারিতায় তাঁর মুখ থেকেই বিষয়টি জেনেছি। বছরব্যাপী বই প্রকাশ করে থাকে সেবা। অথচ বাংলাদেশের নামীদামি প্রকাশনা সংস্থাগুলোর বই প্রকাশের মূল আয়োজনটা চলে একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে। বই বিক্রিতেও নিজস্ব ব্যবসানীতি আছে সেবার—নগদ কারবারের প্রথা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পাওয়া যায় সেবার বই। পরিমাণে হয়তো আহামরি কিছু না। একুশে মেলায় টাকার অঙ্কে বিক্রির দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও পরিমাণে একেবারে প্রথম সারিতেই আসে সেবা প্রকাশনীর নাম। লেখক ও অনুবাদকদের নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত সম্মানী প্রদানের চলটা দীর্ঘদিন ধরেই বজায় রয়েছে। ১৫ বছর পর সেবার কোনো পুরোনো লেখক কখনো বেড়াতে এসে যখন এই সময়কালে তাঁর পুঞ্জীভূত কিস্তির অর্থ হাতে পান, তখন বিস্ময়ের শেষ থাকে না। হোক না পরিমাণটা কম বা বেশি।

৫.
৪৭ বছরে এসে সেবা প্রকাশনীর জৌলুশ এখন অনেকটা ম্লান। কিছু ক্ষেত্রে সময়ের থেকে পিছিয়েও পড়েছে সেই প্রতিষ্ঠানটি, যেটি কিনা তার উঠতি কৈশোরে বা যৌবনে সময়ের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই ছিল। বুঝি বা এটাই সেবার রহস্য। রহস্য সেবার প্রাণপুরুষ, পাঠকের প্রিয় কাজীদার। এ বছর ১৯ জুলাই কাজীদা ৭৫ বছর পূর্ণ করে পা দিচ্ছেন ৭৬-এ। পিছু ফিরে তাকালে কি কাজীদা নিজেই বিস্মিত হন না যে কত রহস্যই তিনি রেখে এলেন?

কাজীদার নিজের প্রিয়ঃ
নিজের লেখা প্রিয় বই রবিন হুড। গল্পের মধ্যে ‘পঞ্চ রোমাঞ্চ’ ও ‘ছায়া অরণ্য’। উপন্যাসের মধ্যে: তিনটি উপন্যাসিকাবিশ্বাসঘাতক। কিশোর-উপন্যাসের মধ্যে ইতিকথা। ‘মাসুদ রানা’র মধ্যে স্বর্ণমৃগ, বিস্মরণ ও শত্রু ভয়ংকর
প্রিয় রোমাঞ্চোপন্যাস লেখক অ্যালিস্টেয়ার ম্যাকলিন, জেমস হ্যাডলি চেজ, ইয়ান ফ্লেমিং ও উইলবার স্মিথ।

source: ছুটির দিনে

No comments:

Post a Comment

Comment here if you have anything to ask me. Please do not spam.